বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশ কোনগুলো? এই প্রশ্নের উত্তর আছে বৈশ্বিক শান্তি সূচকে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস বৈশ্বিক শান্তিসূচক প্রকাশ করে। শান্তিপূর্ণ দেশ নির্ধারণে নানা বিষয় বিবেচনায় নিয়ে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। প্রধান তিনটি বিষয় হলো—সামাজিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তা, চলমান অভ্যন্তরীণ-আন্তর্জাতিক সংঘাত ও সামরিকীকরণ। পৃথিবীজুড়ে যুদ্ধ-সংঘাত, ক্ষুধা-দারিদ্র্য, নির্যাতন-নিপীড়ন আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্যেও কিছু দেশের নাগরিকরা তুলনামূলক শান্তিতে বসবাস করছেন।
ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিসের ২০২৪ সালের বৈশ্বিক শান্তি সূচক অনুসারে বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ ১০ দেশ হলো—১. আইসল্যান্ড (ইউরোপ) ২. আয়ারল্যান্ড (ইউরোপ) ৩. অস্ট্রিয়া (ইউরোপ) ৪. নিউজিল্যান্ড (এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল) ৫. সিঙ্গাপুর (এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল) ৬. সুইজারল্যান্ড (ইউরোপ) ৭. পর্তুগাল (ইউরোপ) ৮. ডেনমার্ক (ইউরোপ) ৯. স্লোভেনিয়া (ইউরোপ) ১০. মালয়েশিয়া (এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল)
আইসল্যান্ড:
আইসল্যান্ড ইউরোপ মহাদেশের একটি প্রজাতান্ত্রিক দ্বীপ রাষ্ট্র এবং এর রাজধানী রেইকিয়াভিক। আইসল্যান্ডে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ও অন্যান্য ভূ-উত্তাপীয় কর্মকাণ্ড নৈমিত্তিক ঘটনা। দ্বীপটির প্রায় ১১% হিমবাহ আবৃত। প্রায় ২০% এলাকা ব্যবহার করা হয় পশুচারণের জন্য আর মাত্র ১% এলাকায় কৃষিকাজ হয়। বর্তমানে কিছু বার্চ গাছের জঙ্গল ছাড়া আর তেমন বনভূমির অস্তিত্ব নেই।
আইসল্যান্ডবাসী তাদের ভাইকিং ঐতিহ্য নিয়ে বেশ গর্ব করে। যেসব কারণে শান্তিপূর্ণ দেশের তালিকায় প্রথমে আইসল্যান্ড:
শ্রেণিভেদ নেই: দেশটির অধিবাসীদের মধ্যে ধনী-গরিবের কোনো ভেদাভেদ নেই। সেখানকার ৯৭% নাগরিক নিজেদের মধ্যবিত্ত বলেই আখ্যায়িত করে। তাদের মধ্যে আর্থিক কোনো অস্থিতিশীলতা নাই। তারা তাদের সন্তানদের একই ধরনের স্কুলে পাঠান এবং খুব সাধারণ জীবনযাপন করেন। ধর্মীয় কোনো বিষয় নিয়েও উত্তেজনা নেই। অধিকাংশ নাগরিক ইভানজেলিকাল “লুথেরান” ধর্মে বিশ্বাসী। এখানে অন্যান্য ধর্মের মানুষও রয়েছেন ।
নেই লিঙ্গ বৈষম্য: ‘‘ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম ফর জেন্ডার ইকুয়ালিটি’’ এর তালিকা অনুসারে, আইসল্যান্ড পর পর ৭ বছর ধরে লিঙ্গ সমতার দিক থেকে এক নম্বরে রয়েছে। ১৪৪টি দেশের তালিকায় এই ছোট দেশটি শিক্ষা ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীদের অবস্থান সক্ষম হয়েছে এবং শতকরা ৬৬ ভাগ নারী উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ পুরুষদের তুলনায় বেশি। ৮০ ভাগ নারীই বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে জড়িত।
পারিবারিক ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী দুজনের অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য বাধ্যতামূলক পিতৃত্বকালীন ও মাতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়া হয়। ১৯৮০ সালে ভিগদিস ফিনবোগাদোত্তির সমগ্র বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম নারী রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতায় আসেন।
সেনাবাহিনী বা পুলিশ নেই : এই দ্বীপরাষ্ট্রটির জনসংখ্যা সবাই-ই বেশ শান্তিপ্রিয়। এই দেশ রাজনৈতিকভাবেও বেশ নিরপেক্ষ। তবে তারা এখনও একটি ছোট উপকূলীয় বাহিনী বহাল রেখেছে যেখানে তিন থেকে চারশ’ সৈনিক, ৪টি যুদ্ধবিমান এবং ৩টি পেট্রোল মজুদ করা জাহাজ আছে।
১৯৪৪ সালে স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এই দেশটি শান্তিপূর্ণ ভাবে পরিচালিত হয়েছে। আইসল্যান্ডের পুলিশ সাধারণত বন্দুক, পিস্তল বা কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে না। যদিও প্রশিক্ষণের সময় তাদেরকে এগুলো চালানো শেখানো হয়। সেখানে সাধারণ কোনো জনগণ চাইলেই নিজের কাছে কোনো অস্ত্র কিনতে বা রাখতে পারে না এবং অবৈধ পন্থায় সেখানে তা কেনার কোনো সুযোগও নেই।
অন্য একটি বিষয় হলো আইসল্যান্ডবাসীর মধ্যে খুন করার প্রবণতাও অনেক কম। প্রতি বছর শতকরা ০-১.৫% খুনের ঘটনা দেখা যায়। এছাড়া কোনো বড় অপরাধ তো দূরের কথা, ছোটখাটো চুরিও সেখানে বিরল ঘটনা। তাই পুলিশের বেশি একটা দরকার পড়ে না।
চতুর্থ সুখী দেশ: আইসল্যান্ড বিশ্বের শীর্ষ ৫টি সুখী দেশগুলোর অন্তর্ভুক্ত। চতুর্থ অবস্থানে থাকা আইসল্যান্ড যেসব ইতিবাচক দিকগুলোর জন্য এই অবস্থান অর্জন করেছে সেগুলোর মধ্যে আছে- তুলনামূলক কম আয়কর, বিনামূল্যে শিক্ষা এবং চিকিৎসা সেবা । মূলত কোনো দেশের নাগরিকদের মধ্যে ৬টি নির্দেশকের উপস্থিতির ভিত্তিতে এই তালিকা তৈরি হয়। যেমন- মাথাপিছু জিডিপি, সুস্থভাবে জীবনযাপনের আয়ুষ্কাল, সামাজিক সহায়তা, বিশ্বাস, নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দেওয়া বা স্বাধীনতা এবং উদারতা।