সেই লম্বা-রোগাটে ছেলেটি চরাই-উতরাই পেরিয়ে ছুটেছেন অনেকটা পথ। এই গতিময়তাই যেমন তাঁকে চূড়ান্ত পেশাদার সাফল্য এনে দিয়েছে, তেমনই বারবার বাঁক বদল করিয়েছেন তিনি। কুলি থেকে এমএলএ ফাটাকেষ্ট। গাঢ় লাল থেকে সবুজ হয়ে মহাগুরু এখন রাজনৈতিক রণবীর রণভূমিতে পদার্পণ। এখনও সচল তিনি।
তাঁর জীবনে কত ডার্ক, কত ধরণের উঁচু-নিচু, কত তিক্ততা, স্বেচ্ছানির্বাসন। সিটি অফ জয় তাঁর কাছে এক সময়ে একেবারে ‘জয়ফুল’ হয়ে ওঠেনি। মিঠুন পালিয়ে যান, শহর ছেড়ে অনেক দূরে, মায়া নগরীতে। এক সাক্ষাৎকারে মিঠুন বলেন, “জানতাম না খাবার জুটবে কি না……… ভেবেছিলাম এবার আত্মহত্যা করতে হবে”।
ধৈর্য কাকে বলে, অধ্যবসায় কি তা তাকে দেখলেই স্পষ্ট বোঝা যায়। তীব্র লড়াই , সে লড়াই পৌঁছে দিয়েছিল পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউট। ধৈর্য তিনি ধরতে জানেন কিন্তু বাঙালিকে গাল পাড়লেন এক সিনিয়র, মিঠুন বললেন, “অনেকক্ষণ ধরে সহ্য করেছি। বাঙালি নিয়ে, আর একটা কথা বললে, মেরে মুখ ফাটিয়ে দেব”। অনেকে বলেন, এটাই মিঠুন চক্রবর্তী। চির প্রতিবাদী।
এখন কম কথা বলেন। বুঝে কথা বলেন। বয়স সত্তরের কোঠায়। অভিনয় জীবনে তাঁর সাফল্য প্রশ্নাতীত। সামাজিক কাজেও বারবার এগিয়ে এসেছেন মিঠুন। আবার এসবের পাশাপাশি, রাজনৈতিক কারণে আলোচনায় রয়েছিলেন বাঙালিবাবু।
মিঠুনের ঘাসফুল সংস্রব খুব দীর্ঘ হয়নি। সেই দীপ্তি ক্রমশ নিস্প্রভ হয়ে যায় চিটফান্ড কাণ্ড এবং তারপর ইডির ডাকে। শেষমেশ অসুস্থতার কারণে সাংসদ হিসাবে পদত্যাগ করেন মিঠুন।পরে বিতর্কের জেরে তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব তো বাড়েই, এমনকী লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান মেগাস্টার।
এসবের মাঝেই হঠাৎ ছড়িয়ে পড়ে মিঠুনের মৃত্যুসংবাদ! না, তাঁর মৃত্যু হয়নি। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ভুয়ো খবর ছড়িয়েছিল। আসলে তিনি দিব্য ছিলেন, সুস্থ ছিলেন এবং হঠাৎ করেই আবার ফিরলেন রিয়েলিটি শোয়ের মঞ্চে।
একসময়ে স্বেচ্ছানির্বাসনে গিয়েছিলেন মিঠুন। কিন্তু রাজনীতি কি আর তাঁকে দূরে থাকতে দেয়। সেই জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অনুমান সত্য রাজনৈতিক রণবীর রণভূমিতে পদার্পণ। মাইক হাতে নিয়ে অভিনেতা বললেন, “আমি জলঢোড়াও নই, বেলেবোরাও নই। জাত গোখরো। এক ছোবলেই ছবি।” আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম, গরীবদের জন্য কাজ করব। আমার মনে হচ্ছে সেই স্বপ্নটা আমি দেখতে পাচ্ছি। এটা হবেই। আমি বাঙালি।