গ্রামাঞ্চলে বেশি সাপের আতঙ্ক থাকে। বর্ষা মৌসুমে এটি বেশি বৃদ্ধি পায়। এ সময় বনে-পাহাড়ে ও গ্রামাঞ্চলের মাঠে ঘাটে সাপ দেখতে পাওয়া যায়। সাপে কাটলে বেশির ভাগ মানুষ ঘাবড়ে যান। এ সময় ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে।
সাপে কাটলেই মানুষের মৃত্যু হবে এমন একটি প্রচলিত ভুল ধারণা আমাদের মনে বনে কোনে লুকিয়ে রয়েছে। যা নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক অনিরুদ্ধ ঘোষ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, বাংলাদেশে ৮০% সর্প দংশনের ক্ষেত্রে সাপ থাকে নির্বিষ। ফলে সাপে কাটলেই মৃত্যু হবে এমন ধারণা সঠিক নয়।
বাংলাদেশে প্রতিবছর অনেকে বিষধর সাপের কামড় খেয়ে মারা যান শুধুমাত্র সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পাওয়া বা অ্যান্টিভেনম সেবা না পাওয়ার কারণে।
সাপ যদি দংশন করে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব সাপে কামড়ানোর ওষুধ বা অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করতে হবে। তাহলে মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব।
বাংলাদেশের সাপের কামড়ে আহত রোগীদের চিকিৎসায় যে অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন ব্যবহার করা হয় সেটি সব ধরনের সাপে কাটা রোগীর জন্যই ব্যবহার করা হয়। এগুলো সরকার বিনামূল্যে সরবরাহ করে।
সাপে কাটা রোগীদের ক্ষেত্রে কী করতে হবে, আর কী করা যাবে না সেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
যা করতে হবে
- শান্ত থাকুন এবং দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।
- কাপে কাটা স্থানে যতটা সম্ভব কম নড়াচড়া করুন। নড়চড়া কম হলে শরীরে বিষ কম ছড়ায়।
- ঘড়ি বা অলঙ্কার পরা থাকলে খুলে ফেলুন।
- হাত বা পা ভাঙলে যেমন করে শক্ত কিছু দিয়ে কাপড় দিয়ে হলকা করে বাধা হয়, সেভাবে বাধুন। তবে খুব শক্ত করে বাধা যাবে না।
- পরিহিত কাপড়ের গিট ঢিলা করে দিন, তবে খুলবেন না।
যা করা যাবে না
- আতংকিত হওয়া যাবে না।
- ওঝা বা ঝাড়ফুঁকের অপেক্ষা করে কালক্ষেপণ করবেন না।
- কোনো মলম বা মালিশ লাগানো যাবে না।
- চিকিৎসক দেখার আগ পর্যন্ত কোনো কিছু খাওয়া যাবে না।
- কামড়ের স্থান থেকে চুষে বিষ বের করে আনার চেষ্টা করা যাবে না।
- কামড়ের স্থান আরও কেটে বা সেখান থেকে রক্তক্ষরণ করে বিষ বের করে আনার চেষ্টা করবেন না।
- বরফ, তাপ বা কোনও ধরনের রাসায়নিক কামড়ের স্থানে প্রয়োগ করবেন না।
- আক্রান্ত ব্যক্তিকে একা ফেলে যাবেন না।
- কামড়ের স্থানের গিঁটের কাছে শক্ত করে বাঁধা যাবে না। এর ফলে বিষ ছড়ানো বন্ধ হবে না এবং আক্রান্ত ব্যক্তি পঙ্গুত্ত হতে পারেন।
- বিষধর সাপ ধরা থেকেও বিরত থাকা উচিত। এমনকি মৃত সাপও সাবধানতার সঙ্গে ধরা উচিত। কারণ, সদ্যমৃত সাপের স্নায়ু মারা যাওয়ার কিছুক্ষণ পরও সতেজ থাকতে পারে এবং তা দংশন করতে পারে।