আমের কথা উঠলেই প্রথমে চলে আসবে রাজশাহী অঞ্চলের নাম। এখন চলছে আমের মওসুম।রাজশাহীতে আমের কোন কমতি নেই। লক্ষ লক্ষ গাছে কোটি কোটি আমের সামরোহ। মাইলের পর মাইলজুড়ে শুধুই আম বাগান। । বাগানের মধ্যদিয়ে চলে গেছে মাইলের পর মাইল রাস্তা।আম ভালোবাসে ছোট বড় সকলে। তাই জগৎ জুড়ে বাংলার রাজশাহীর আমের কদর। আর আমাদের জাতীয়বৃক্ষ এই আম্রবৃক্ষ।
স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টি মানের বিবেচনায় জগৎ জুড়ে আদর্শ ফল হিসাবে মর্যাদা পেয়েছে। এসব অঞ্চল থেকে পর্যটকদের মাধ্যমে আম চাষের বিস্তার লাভ করেছে জগৎ জুড়ে। আগের মত বাড়িতে দু’চারটি আম গাছ না থাকলেও পরিকল্পিতভাবে বাণিজ্যিকভাবে বড় বড় আম বাগানের চাষাবাদ করা হচ্ছে।
কত নামের কত জাতের আম গাছে তা হয় তো সকলের জানাও নেই। আমের যেমন শত শত জাত রয়েছে। তেমনি রয়েছে বাহারী নামও, যা নিয়ে কথার শেষ নেই। এ অঞ্চলের মানুষ তাদের ফজলী, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, খিরসাপাত, রানীপছন্দ নিয়ে গর্ববোধ করে।
আমবাগান তার মুকুলের সুবাস আর স্বাদ-গন্ধ সকলের মনে দোলা দেয়। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাই লিখতে ভুলেননি “ওমা ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রানে পাগল করে”।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম গেয়েছেন “এনেদে মাঠ থেকে বাবলাফুল, আমের মুকুল নইলে রাধবনা, বাঁধবনা চুল”। আমাদের পল্লী কবি জসিম উদ্দীন লিখেছেন “মামার বাড়ি” কবিতায় “ঝড়ের দিনে মামার দেশে আম কুড়াতে সুখ। পাকা আমের মধুর রসে রঙ্গীন করে মুখ।”
আম দেশের অর্থনীতিতে ভালো ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। আর বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হবার কারণে প্রতিবছর বাড়ছে আম বাগানের পরিমাণ। চাষাবাদে যোগ হয়েছে বৈজ্ঞানিক কলাকৌশল।গাড়ি নিয়ে চলতে গেলে চোখে পড়বে শুধু আম আর আম। থোকায় থোকায় আমে বাতাসের দুলনী। আপনার মনকে নাড়া না দিয়ে পারবে না।
লাখ লাখ গাছের কোটি কোটি আমের দৃশ্য আপনার মনকে জয় না করেই পারবে না।বাগানের মধ্যদিয়ে হাঁটতে গেলে ঝুলে থাকা আমের থোকা আপনার দেহ ছুঁয়ে যাবে, মনকে করবে শিহরিত। আমের থোকা জড়িয়ে ছবি কিংবা সেলফি না তুলে থাকতেই পারবেন না।
গাছ পাকা আমের স্বাদই যে আলাদা। এ অঞ্চলে মামার বাড়ি নেই তো কি হয়েছে। রয়েছে এখানকার অতিথি পরায়ণ মানুষ যাদের নিজের মামু ভাবতে পারেন। এ অঞ্চলের মানুষগুলো খুবই সহজ সরল। এই গরম আর বর্ষায় সমুদ্র দর্শনে না গিয়ে অনায়াসে চলে আসতে পারেন আম ভরা বাগানে।
রাজশাহীতে জমে উঠেছে আমের বাজার। জেলার সবচেয়ে বড় বাজার বানেশ্বর হাটে গোপালভোগ কেনাবেচা জমেছে। হাটে গিয়ে দেখা গেছে, চাষি ও ব্যবসায়ীরা ভ্যান এবং নসিমন-করিমনে করে আম নিয়ে হাটে আসছেন। এসব গাড়িতে ৩০ থেকে ৬০টি ক্যারেট থাকছে। ভ্যান ও ট্রলির ওপর সাজিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। অনেকে বাজারে মাচা পেতে বসেছেন। অপেক্ষাকৃত পাকা আমগুলো ওপরে রাখা হয়েছে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য।
ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের আম কেটে দেখাচ্ছেন। অনেকে খেয়ে পছন্দ হলে কিনছেন। অনেকেই আবার অনলাইনে আমের ব্যবসা করেন। তবে খুচরা ক্রেতা কম।